লেবু উৎপাদন ও চাষাবাদ পদ্ধতি। - Agro Pro

লেবু উৎপাদন ও চাষাবাদ পদ্ধতি।

 

লেবু চাষ

চলুন জেনে নিই কিভাবে লেবু চাষ করা যায়।লেবু চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না। আমাদেরকে লেবু চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে, যার ফলে আমরা লেবু চাষ করে অনেক টাকার মালিক হতে পারি।


লেবু জাত নির্বাচনঃ

কাগজি, কলম্বো, এলাচী, সীডলেস, সাতকরা,ফিঙ্গার -এগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী জাত নির্বাচন করুন।তবে ফিঙ্গার লেবু না লাগানোই ভালো,সখের ব্যপার হরে ভিন্ন কথা!ছাদের জন্য আমার মতে কাগজি লেবুই উত্তম। কাগজি লেবু শীতের মৌশুম সহ বারো মাস গাছে থাকে।


স্থান নির্বাচনঃ

আমার মতে লেবুর জন্য অতোটা তীব্র রোদের প্রয়োজন নেই।তবে উপরের দিকে খোলামেলা জায়গা হলে ভালো হয়। বারান্দায়ও লেবু গাছ লাগানো যায়।বেশি ছায়াতে গাছ থাকলে লেবু গাছে রোগে বেশি আক্রান্ত করে এবং তুলনামুলক ফলনও কম হবে।সারা দিনে ৫/৬ ঘন্টা ভালো রোদ পায় এবং উপরের দিক খোলা মেলা এমন জায়গা লেবু চারা লাগানোর জন্য উত্তম।ছাদে বা বারান্দার লাগাতে চাইলে বড়ো হাফ ড্রামই উত্তম, না হলে অন্তত ব্লিচিং ড্রামের তলানিতে ৪/৫ টা বড়ো ছিদ্র করে, তাতে লেবু চারা লাগানো উচিৎ।



লেবুর পুষ্টিগুণঃ

লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি´ রয়েছে। এছাড়াও লেবুর রস মধুর সাথে অথবা লবণের সাথে মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা ও সর্দি কাশি সারে।


লেবুর জাতঃ

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের লেবুর জাত রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু উচ্চফলনশীল লেবুর জাত হচ্ছে, বারি লেবু-১, বারি লেবু-২, বারি লেবু-৩, বাউ কাগজী লেবু-১, বাউ লেবু-২ ইত্যাদি। এ সকল জাতের লেবু গাছ থেকে বেশি ফল পাওয়া যায় জুলাই-আগষ্ট মাসে।


লেবুর চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটিঃ

মার্চ অক্টোবর মাসে লেবুর চারা রোপণ করতে হবে। প্রায় সব ধরণের মাটিতে লেবুর চাষ করা যায়। কিন্তু অম্ল যুক্ত দো-আঁশ মাটি বেশি উযোগী। এ মাটিতে লেবু উৎপাদন ভাল হয়।


লেবুর চারা রোপণ পদ্ধতিঃ

ক. গুটি কলম ও কাটিং তৈরি করে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত লেবুর চারা রোপণ করা হয়।

খ. চারা রোপণের সময় একটা চারা হতে আর একটা চারার দূরত্ব কম পক্ষে ৫ মিটার হতে হবে।

গ. ৮-১০ মাসের চারা রোপণ করলে ভাল হয়।


লেবুর চাষে সার প্রয়োগঃ

ভালো ফলন পেতে হলে জৈব সারের বিকল্প নেই বললেই চলে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার দেওয়া উচিত। জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকে।এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে।


লেবুর সেচঃ

শুকনা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ দিতে হবে। এবং বর্ষার সময় গাছের গোড়ায় পানি জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।


লেবুর রোগবালাই


লেবু চাষ পদ্ধতিঃ

ক। প্রধান প্রধান শেকড়ের মধ্যে লেবুর পোকা ও ফলমাছি কাঁচা ফল থেকে রস শুষে নেয়।


খ। ফলমাছি ফলের ভেতরের অংশ ক্ষতি করে।


গ।লেবু গাছ প্রচুর রোগে আক্রান্ত হয়।এজন্য গাছ রোদে রাখা জরুরী এবং বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষা শেষে মোট দুই বার সুষম সার প্রয়োগ করা উচিৎ।পাশাপাশি যথা সময়ে পটাশ সারের প্রয়োগও গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।



লেবু চাষ পদ্ধতিঃ

ঘ।গাছের কচি পাতা এক ধরনের লম্বা এবং নরম পোকায় খেয়ে ফেলে,এক্ষেত্রে প্রতি লিটার জলে এক মিলি ক্লোরোপাইরিফস ২০ ইসি মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।


ঙ। লেবুর খোশা ফেটে গেলে অটোক্রপের সলুবর বোরন কম্পোষ্টের সাথে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে এবং একই সাথে এক লিটার জলে চা গ্রাম হারে মিশিয়ে সাত দিন পরপর মোট ২/৩ বার শেষ বিকেলে প্রয়োগ করতে হবে।


লেবুর রোগ প্রতিকারঃ

এসব পোকা দমনে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক পাওয়া যায়। এতে যদি পোকা দমন না হয় তাহলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সাথে বা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।


লেবুর চাষের সময় পরিচর্যাঃ

ক. একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের দূরত্ব ২০-২৫ ইঞ্চি হতে হবে।

খ. শক্ত মাটি গাছের চারদিকে সরিয়ে দিতে হবে।

গ. অতিরিক্ত এবং শুষ্ক ডাল ছাঁটাই করতে হবে।

ঘ. নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।


লেবুর সংগ্রহঃ

একটা পূর্ণ বয়স্ক লেবু গাছ থেকে বছরে কম পক্ষে ২০০-৪০০টি লেবু পাওয়া যেতে পারে। লেবু পুষ্ট হলে লেবু গায়ে তেলতেলে ভাব দেখা দেয়। ফল কিছুটা হালকা হলুদ রঙ ধারণ করলে ভাদ্র মাসের শুরু থেকে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়।


সুবিধাঃ

বাড়ির আনাচকানাচে ফেলে রাখা জমিতেও লেবু চাষ করা যায়। একবার লেবু বাগান করতে পারলে কমপক্ষে ১০ বছর আয় করা সম্ভব।


বাজারজাতকরণঃ

সাধারণত লেবুগাছে ফলন আসতে এক বছর সময় লাগে। তবে, কলমের গাছ লাগাতে পারলে চাষের বছরেই ফল পাওয়া যায়। গ্রাম-শহর সর্বত্রই লেবুর চাহিদা রয়েছে। পাইকাররা বাগানে এসে লেবু কিনে নেয়।



No comments:

Powered by Blogger.