পেয়ারা চাষাবাদ ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি।
পেয়ারা একটি দ্রুত বর্ধণশীল গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। দেশের সর্বত্র কম বেশী এ ফলের চাষ হয়।
পেয়ারা ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ একটি ফল। এ ছাড়া পেয়ারাতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন-বি ও প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যেমন- ক্যালশিয়াম ও আয়রণ পাওয়া যায়। পেয়ারা কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য ফলে ১৪.৫% শ্বেতসার, ১.৫% প্রোটিন, ১.০% লৌহ, ০.০১% ক্যালসিয়াস, ৩০.০ মিঃ গ্রাম ভিটামিন বি -১, ৩০.০ মিঃ গ্রাম রিবোফ্লোভিন, ২৯৯.০ মিঃ গ্রাম ভিটামিন -সি এবং ৬৬ ক্যালরী রয়েছে। ফলে যথেষ্ঠ পরিমাণে পেকটিন থাকায় এ থেকে সহজেই জ্যাম, জেলী, চাটনী ইত্যাদি মুখরোচক খাবার তৈরী করা যায়।
বন্যা মুক্ত উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমি পেয়ারা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি কয়েক বার চাষ ও মই দিয়ে তৈরী করতে হয়।
পেয়ারার চারা বা কলম ৪-৫মিঃ x ৪-৫ মিঃ দুরুত্বে রোপণ করা হয়। ৬০ x ৬০ x ৬০ সেমিঃ আকারের মাদা তৈরী করতে হবে। প্রতি গর্তে ১০-১৫ কেজি পঁচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমপি সার মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পর গর্তের মাঝখানে একটি সুস্থ ও সবল চারা বা কলম রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর পরই চারার গোড়ায় জল সেচ দিতে হবে এবং একটি খুটি পুঁতে চারাটিকে তাঁর সাথে বেধে দিতে হবে যেন চারাটি হেলে না পড়ে বা বাতাসে উপড়ে ফেলতে না পারে।
উপযুক্ত পরিবেশঃ
সাধারণতঃ উষ্ণ ও অবউষ্ণ মন্ডলের জলবায়ু পেয়ারা উৎপাদনের জন্য উপযোগী। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ মাটি থেকে ভারী এটেল মাটি যেখানে জল নিষ্কাষনের বিশেষ সুবিধা আছে সেখানে পেয়ারা ভাল জন্মে।
বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করা খুব সহজ। কিন্তু বীজের গাছে মাতৃগুনাগুন সম্পন্ন পেয়ারা নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই বীজ দিয়ে বংশ বিস্তার না করে কলমের দ্বারাই বংশ বিস্তার করাই উত্তম। প্রধানত গুটি কলমের মাধ্যমে মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হয়। কিন' আজকাল দেখা যায় গুটি কলমে উৎপাদিত চারা উইল্ট রোগের আক্রান- হয়ে ব্যাপক হারে বাগান বিলীন হচ্ছে। তাই গুটি কলমের পরিবর্তে করা উইল্ট প্রতিরোধী জাত যেমন - পলি পেয়ারার রুটষ্টকের উপর সংযুক্ত জোড় বা ফাটল জোড় কলমের মাধ্যমে এ পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করা হয়। মে - জুলাই মাস কলম করার উপযুক্ত সময়।
পরিচর্যা ও সার ব্যবস্থাপনাঃ
যদিও পেয়ারা গাছ বেশ খরা সহ্য করতে পারে কিন' ফলন আশানুরুপ পেতে হলে শুষ্ক মৌসুমে ১৫ দিন পর পর গাছে সেচ দিতে হবে। তাছাড়া প্রতিবার গাছে সার প্রয়োগ করে গাছের গোড়ায় প্রয়োজনীয় রস সরবরাহের জন্য সেচ দিতে হবে। এ ছাড়াও বর্ষা কালে জল নিকাশ ও খরা মৌসুমে নিয়ামিত সেচ প্রদান করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
প্রতি গর্তে ১০-১৫ কেজি পঁচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমপি সার মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পর গর্তের মাঝখানে একটি সুস্থ ও সবল চারা/ কলম রোপণ করতে হবে ।
চারা রোপনের বছর বর্ষার আগে ও পরে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম করে পটাশ ও টিএসপি সার এবং ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগঃ প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী, মে ও সেপ্টম্বর মাসে তিন কিসি-তে গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। সার বয়স ভেদে গাছের গোড়া ২৫-৫০ সেমিঃ বাদ দিয়ে দুপুর বেলায় গাছ যে পরিমাণ জায়গা জুড়ে ছায়া প্রদান করে সে পরিমাণ জায়গায় গাছের গোড়া চারদিকে সার প্রয়োগের পর সম্পুর্ণ জায়গা কুপিয়ে উপরোক্ত সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
No comments: