কাঁকরোল চাষাবাদের সঠিক পদ্ধতি।
কাঁকরোল চাষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই হয়ে থাকে। কাঁকরোল চাষ করে অনেক কৃষকই সফল হচ্ছেন। আবার অনেক কৃষকই কাঁকরোল চাষের সঠিক পদ্ধতি না জানার ফলে আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না। কাঁকরোল একটি পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় সবজি। কাঁচা কাঁকরোল তরকারি, ভাজি ও ভর্তা ইত্যাদি হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁকরোলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, আমিষ ও খনিজ পদার্থ। আসুন জেনে নেই কাঁকরোল চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কেঃ-
কাঁকরোলের জাতসমূহঃ
আমাদের দেশে কাঁকরোলের বিভিন্ন প্রকারের জাত আছে। এসব জাতের মধ্যে আসামি, মণিপুরি, মুকুন্দপুরি ও মধুপুরি অন্যতম। এ সকল জাতের ফলগুলো খেতে বেশ সুস্বাদু এবং ফলনও বেশি হয়।
কাঁকরোল চাষে মাটি নির্বাচনঃ
আমাদের দেশে প্রায় সকল প্রকার মাটিতে কাঁকরোলের চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ, এঁটেল-দো-আঁশ মাটি কাঁকরোল চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। কাঁকরোল চাষের জন্য এমন স্থান হতে হবে যেখানে পানি কোনভাবেই জমে থাকতে পারে না।
কাঁকরোলের জমি তৈরিঃ
কাঁকরোল চাষের জন্য জমিতে ৪-৫ চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর চাষের জমিতে প্রয়োজনীয় মাপের মাদা তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক মাদায় ৪-৫ টি বীজ বপণ করতে হবে।
কাঁকরোলের বপনের সময়ঃ
কাঁকরোলের বীজ বপন বপন বা মোথা রোপণের উত্তম সময় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন সময় পর্যন্ত।
কাঁকরোলের বেড তৈরীঃ
১। জমির দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে।
২। প্রস্থঃ ৩০০ সে.মি।
৩। দুই বেডের মাঝে নালার প্রস্থ ৩০ সেমি।
৪। দুই বেডের মাঝে নালার গভীরতা ২০ সেমি।
৫। প্রতি বেডে দুটি সারি থাকবে।
৬। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২০০ সেমি।
৭। প্রত্যেক সারিতে ৬০x৬০x৬০ সেমি আকারের গর্ত তৈরী করতে হবে।
৮। মাদা থেকে মাদার দূরত্ব হবে ২৫০ সেমি।
৯। হেক্টরপ্রতি প্রতি মাদার সংখ্যা হবে ২০০০টি।
বীজ বা মোথা বপনঃ
ক। কাঁকরোল চাষের জন্য মোথা রোপণ করতে হবে। ২ মিটার দূরত্বে সারিতে ও ব্যবধানে ৫-৬ সেমি গভীরে মোথ রোপণ করে খড়কুটা দ্ধারা ঢেকে দিতে হবে।
খ। রোপণের জন্য নির্বাচিত মোথার ৫% পুরুষ গাছের মোথা হতে হবে।
গ। কাঁকরোলের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে জন্মেই পরাগায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্ত্রী গাছের পাশাপাশি আনুপাতিক হারে পুরুষ গাছ লাগাতে হবে।
কাঁকরোলের সার প্রয়োগঃ
কাঁকরোল চাষের জন্য প্রতি হেক্টর তিন থেকে পাঁচ টন পচা গোবর, ১২৫ থেকে ১৫০ কেজি ইউরিয়া ১০০ থেকে ১২৫ কেজি টিএসপি, ১০০ থেকে ১২৫ কেজি এমওপি, ৮০ থেকে ১০০ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপনের সময় অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি এবং অন্যান্য সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সমান দুই কিস্তি করে গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে ১ বার এবং ফুল আসার পর প্রয়োগ করতে হবে।
কাঁকরোলের পরিচর্যাঃ
বীজ হতে চারা গজানোর পর কাঁকরোল গাছের জমি নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমির মাটি ও গাছের অবস্থা বুঝে পানি সেচ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন অতিরিক্ত পানি না জমে এবং জমলে তা বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। কাঁকরোলের গাছ ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে এর গোড়ায় একটি করে বাশেঁর কুঞ্চি বা কাটি পুঁতে দিতে হবে এবং গাছ ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে কাঁকরোল গাছের জন্য মজবুত করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
কাঁকরোলের পোকা ও রোগবালাই দমনঃ
কাঁকরোল বিভিন্ন পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। পোকারগুলোর মধ্যে জাবপোকা, মাছিপোকা ও বিছাপোকা উল্লেখযোগ্য। এসকল পোকা গাছের পাতা, ফুল ও ফল নষ্ট করে।এবং কচি কাণ্ডের রস শুষে নেয়। গাছে এসকল পোকার আক্রমণ বেশি হলে এগুলো দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও কাঁকরোল গাছে বিভিন্ন প্রকার রোগ দেখা যায়। যেমন- চারার ঢলে পড়া, পাউডারি মিলডিউ ও মোজাইক। প্রথম দুটি ছত্রাকজনিত এবং শেষেরটি ভাইরাসজনিত রোগ। এসব রোগের আক্রমণে কচি গাছের গোড়া পচে যায় এবং চারা ঢলে পড়ে মারা যায়। আক্রান্ত গাছগুলো তুলে ফেলতে হবে তারপর তা পুতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
No comments: